Saturday, 13 May 2023

হাড় ক্ষয় হলে কী করবেন?

 



প্রতিবছর ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস পালিত হয়। এবারে এ দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল হাড়কে ভালোবাসুন, আপনার ভবিষ্যৎ রক্ষা করুন।

অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় বলতে শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়াকে বোঝায়। এতে হাড় অনেকটা মৌচাকের মতো হয়ে যায়। এতে হাড় ঝাড়রা বা ফুলকো হয়ে যায়। এতে হাড় অতি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মারাত্মক হাড় ক্ষয়ে হাঁচি বা কাশি দিলেও তা ভেঙে যেতে পারে।

৫০ বছর পেরুবার পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় বা এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। কারও কারও আগেও হয়।

যাঁদের ক্ষেত্রে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি তাঁদের দ্রুত হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। নারীদের পিরিয়ডের পর হাড় ক্ষয়ের হার বেড়ে যায়।

উপসর্গ

প্রথমত, কোনো শারীরিক লক্ষণ না-ও থাকতে পারে। কোমরে বা পিঠে বা অন্য কোথাও ব্যথা, বিশেষ করে তা ব্যথানাশকে কমছে না, এমন চরিত্রের। কারও কারও দৈহিক উচ্চতা কমে থাকবে, কুঁজো হয়ে যাওয়া বা সামনে ঝুঁকে থাকা। তবে সংগোপনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো, মেরুদণ্ডে ফাটল বা চিড় ধরা এবং ঠুনকো আঘাতেই হাড় ভাঙা।

কাদের হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেশি?

অসংশোধনযোগ্য ঝুঁকি

l বয়ঃবৃদ্ধি

l স্ত্রী লিঙ্গ

l জিনগত ত্রুটি

l অপারেশনের কারণে ডিম্বাশয় না থাকা

l হায়পোগোনাডিজম (পুরুষ ও নারীর)

l অতি খর্বাকৃতি

সংশোধনযোগ্য ঝুঁকি

l ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি

l ধূমপান

l অপুষ্টি [ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ভিটামিন এ, কে ইত্যাদি]

l ক্ষীণকায় দৈহিক আকার

l আমিষনির্ভর খাদ্যাভ্যাস

l বেশি বয়সে অতিরিক্ত চা/কফি/চকলেট গ্রহণের অভ্যাস

l খাদ্যে বা বাতাসে ভারী ধাতু

l কোমল পানীয় ও মদ্যপান

যাঁরা দীর্ঘ দিনের অচল, যাঁরা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের হতে পারে। অন্যান্য হরমোনজনিত রোগ—হাইপারথাইরয়িডিজম, হাইপারপ্যারাথাইরয়িডিজম, কুসিং সিনড্রোম, ডায়াবেটিস, অ্যাডিসন রোগ, রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস, এসএলই, কিডনি অকার্যকারিতা ইত্যাদি।

চিকিৎসা

এ রোগে প্রধান ও প্রথম পদক্ষেপ হবে ঝুঁকি শনাক্তকরণ, সম্ভব হলে তা রোধ করা।

এরপর বেশ ওষুধ পাওয়া যায় যেগুলো চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা যেতে পারে।

যেহেতু হাড় ক্ষয় (অস্টিওপরোসিস) একবার হলে আর রিকভারের সম্ভাবনা থাকে না, তাই একে আগেভাগেই রোধ করার জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসূচি নিতে হবে। এর অংশ হিসেবে কারা কতটুকু ঝুঁকিতে আছেন বা কারা ইতিমধ্যেই হাড় ক্ষয়ে ভুগছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে এবং উপযোগী চিকিৎসা নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে।

কীভাবে হয় হাড় ক্ষয় রোধ?

অস্টিওপরোসিস বা হাড় ক্ষয় রোগ একটি নীরব ঘাতক, যার জন্য প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকার উত্তম।

১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়ামে হাড়ের শক্তি বাড়ে। এতে হাড়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে জয়েন্টগুলো সচল রাখে। শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে হাড় ক্ষয় কমায়।

২. নিয়মিত পরিমাণমতো ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার খান:

হাড়ের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খান।

ভিটামিন ডি-এর ৯০ ভাগ উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো। তাই প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন, পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ খান। এতে হাড় ভালো থাকবে।

৩. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন। কারণ, এতে হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি করে।

৪. ডায়াবেটিস, লিভার, কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৫. হাড় ভাঙা রোধে বাথরুমের পিচ্ছিল ভাব দূর করুন।

৬. রাতে ঘরে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখুন। অন্ধকারে চলাফেরা করবেন না।

৭. অতিরিক্ত ওজন বহন করবেন না। 

সহকারী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Sunday, 1 January 2023

 শীতকালে খেজুরের রসের স্বাস্থ্যের উপকারিতা ও অপকারিতা

শীতকালের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডার মধ্যে কাঁচা খেজুরের রস খেতে পছন্দ করেন অনেকে। কেউ আবার এ রসকে প্রক্রিয়াজাত করে পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় তৈরি করে খেয়ে থাকেন। সারা বছর খেজুরের রস সংগ্রহ করা যায়। তবে শীতকালের খেজুরের রসই বেশি সুস্বাদু। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে রসের পরিমাণ ও মানও কমতে থাকে।

খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে যে খেজুর হয় তাতে যথেষ্ট শাঁস থাকে না বলে অনেকেই এটা খেতে খুব একটা পছন্দ করেন না। তাই খেজুরের রসই আসল আকর্ষণ। খেজুরের রস থেকে তৈরি গুড় অনিদ্রা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খেজুরের গুড়ে আয়রন বা লৌহ বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনতে খেজুরের রস দারুণ উপকারী।

আজ শীতকালে খেজুরের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ...খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে ১৫-২০% দ্রবীভূত শর্করা থাকে, যা থেকে গুড় ও সিরাপ উৎপাদন করা হয়। খেজুরের গুড় আখের গুড় থেকেও বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। ঘ্রাণ ও স্বাদের জন্য এ গুড়ের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। খেজুরের গুড়ে আখের গুড়ের চেয়ে বেশি প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেল রয়েছে। সকালের নাশতায় খেজুর রসের সিরাপ দিয়ে রুটি খেলেই বেশি তৃপ্তি পাওয়া সম্ভব।

খেজুরের রসের উপকারিতা

রসের উপকারিতা জানলে এবার থেকে প্রত্যেক শীতে নিয়ম করে প্রতিদিন এক গ্লাস রস খাবেন। তাহলে শুরু করা যাক খেজুর রসের উপকারিতা এর সাতকাহন: 


প্রকৃতির এনার্জি ড্রিংকস খেজুর রস

খেজুর রসে সরল শর্করা বা ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে প্রায় ১৫ ২০%। এই মিশ্রিত শর্করার সঙ্গে প্রচুর খনিজ লবণ ও মিনারেল থাকে। এত উপকারী উপাদান একসঙ্গে উত্তম অনুপাতে মেশানো থাকে ফলে এটি যেকোনো কৃত্রিম এনার্জি ড্রিংকস এর চাইতে বেশি ভালো ও স্বাস্থ্যকর। এক গ্লাস খেজুরের রস পান করলে নিমিষেই এনার্জি পাওয়া যায়। রসের গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ দ্রুত রক্তে মিশে গিয়ে শক্তির অভাব দূর করে।


রক্ত স্বল্পতা দূর করে খেজুর রস

রসে লৌহ বা আয়রন সুপ্ত অবস্থায় থাকে যদি রস জ্বাল করে গুড় বা লালি তৈরি করা হয় তবে এতে প্রচুর আয়রন থাকে। রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রতিদিন এক টুকরা গুড় বা এক চামুচ লালি খাওয়া উচিত। বাংলাদেশে খেজুর গুড়ের পিঠা খাওয়া বেশ প্রচলিত তাই বিপুল জনগোষ্ঠীর মোটামুটি ১/৫ অংশ এই শীতকালে রক্ত স্বল্পতার হাত থেকে রক্ষা পায়।


পেশীকে মজবুত করে

পেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতা সচল রাখতে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম থাকে তাই রস বা গুড় পেশীকে শক্তিশালী করে। পেশীর অসারতা দূর করতেও এটি কাজ করে। স্নায়ুকোষ পরস্পর যুক্ত থাকে নিউরন নামের সংযোগ স্থলে। এই স্থান দিয়ে অনুভূতির সংকেত চলাচল করে। পটাশিয়াম ও সোডিয়াম স্নায়ু সংকেত চলাচলে প্রধান ভূমিকা রাখে।


ক্লান্তিভাব দূর করে

ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতির কারণে আমাদের অবসন্ন বা ক্লান্তি ভাব আসে। রসে রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম। এটি পান করলে ক্লান্তিভাব দূর হয় এবং দেহের সজীবতা ফিরে আসে।


হাড় মজবুত করে

খেজুর রসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম। এটি হাড় ও পেশী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম এর অভাব দূর করে খেজুর রস।


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

রসে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। দেহের ক্ষতিকর উপাদান বের করে দেয়।


ভিটামিনের অভাব দূর করে

রসে ভিটামিন বি-৩ থাকে। এটি রক্ত উৎপাদন ও ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে। ভিটামিন সি কোষের বর্জ্য পদার্থ দূর করে। সর্দিকাশির হাত থেকে বাঁচায়।


ওজন কমাতে সাহায্য করে

রসের মিষ্টি স্বাদের কারণ অশোধিত চিনি। এটি ধীরে ধীরে রক্তে মিশে যায় ফলে দেহে চর্বি কম জমে। কিন্তু সাধারণ চিনি দ্রুত রক্তে মেশে তাই চিনির খুব ভালো বিকল্প হতে পারে খেজুরের রস। রসে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকায় এটি বিপাক ক্ষমতা বাড়ায় ফলে অতিরিক্ত চর্বি দেহে কম জমে এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।


কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

রসে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে। এটি মলের পরিমাণ বাড়ায় এবং মল নরম করে ফলে রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। খেজুর গুড় একই কাজ করে। এটি অনিদ্রা দূর করতেও সাহায্য করে।


হজম ক্ষমতা বাড়ায়

রস আমাদের হজমে অংশগ্রহণকারী এনজাইমগুলোর ক্ষরণ ও কাজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ফলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। খাওয়ার পর সামান্য পরিমাণ রস বা গুড় খেলে হজম তাড়াতাড়ি হবে।


খেজুর রসের অপকারিতা:

খেজুর রসের অনেক উপকারিতার কথা জানলেন তাহলে এবার অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের খেজুর রস না খাওয়াই ভালো কারণ এর ভেতর থাকা চিনি ডায়াবেটিসের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

কিডনি রোগী খেজুর রস পান করলে সমস্যা হতে পারে। রসের পটাশিয়াম কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে।

রক্তের সমস্যা আছে এমন রোগীর রস না খাওয়া উচিত।


হাপানী বা অ্যাজমা আছে এমন রোগীর ঠাণ্ডা রস পান করা উচিত নয় এতে শ্বাসকষ্ট  বেড়ে যেতে পারে।

বাদুড় রস পান করে রসের হাঁড়ি থেকে আর বাদুড়ের মুখ থেকে বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পরে রস পান করার মাধ্যমে।কখন খাবেন, কখন খাবেন না: খেজুরের রস ভোরবেলায় খাওয়া ভালো। সারা রাত ধরে রস জমে থাকার পর সকাল সকাল এ রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে সময় যত গড়াতে থাকে, তত এতে ফারমেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়া হতে থাকে। 

এতে রসের স্বাদ নষ্ট হয় এবং অম্লতা বাড়ে। অন্ধকারে এই প্রক্রিয়া কম হয়, কিন্তু দিনের আলোতে গাঁজন বেশি হয়। তাই দিনের বেলা রস খাওয়া ঠিক নয়। এতে বমিসহ  পেটের নানা সমস্যা হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে,  খেজুরের রসে যেন কোনো  পোকামাকড় মুখ না দেয়। বাদুড় বা পাখির মুখ দেয়া রস  খেলে রোগ হতে পারে।


কতটুকু রস খাবেন: একজন সুস্থ মানুষ সকালে এক থেকে দুই গ্লাস রস খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে খেলেও সমস্যা নেই। যেহেতু এটি এনার্জি ড্রিংক, তাই শরীরে শক্তি জোগাতে পরিমাণমতো রস খাওয়া ভালো।

কীভাবে খাবেন: রাতে বা সকালে রস খেতে পারেন বা রসের তৈরি বিভিন্ন খাবার  খেতে পারেন। তবে রস  যেহেতু খোলা অবস্থায় গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাই এতে জীবাণু থাকতে পারে। এটা অস্বাস্থ্যকর। এজন্য রস আগুনে হালকা আঁচ দিয়ে বা ফুটিয়ে নিয়ে খাওয়া ভালো। এ ছাড়া রস জ্বাল দিয়ে বিভিন্ন খাবার  তৈরি করে খেতে পারেন।


খেজুর রস খাওয়ার আগে কিছু সাবধানতা: খুব সকালবেলা সূর্যের তাপ বেড়ে যাওয়ার আগেই রস পান করা উচিত। ফাঙ্গাস বা ছত্রাক বাতাসে ভেসে রসের সাথে মিশে যায় এবং সূর্যের তাপে গরম হওয়া রসকে ফারমেন্টেশন করে ফলে প্রথমে এলকোহল বা মদ  তৈরি হয় পরে আরো ফারমেন্টেশনের কারণে ভিনেগার তৈরি হয়। এ ধরনের রস পান করলে পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রসের হাঁড়ি অবশ্যই যেন জাল বা কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে এই বিষয়টি খুব মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করতে হবে। বাদুড় হাঁড়ির ভেতর মুখ ঢুকিয়ে রস খায়। এ থেকে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই খেজুরের রস ফুটিয়ে খাওয়া বেশি নিরাপদ।

পরিশেষে বলতে চাই, এখন শীতকাল। এসময় গাছিরা খেজুর গাছ থেকে খেজুর রস আহরণে ব্যস্ত। তারা খেজুর রস থেকে গুড় বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকে খেজুর গুড় বানানোর পাশাপাশি  খেজুর রসও বিক্রি করে কিন্তু এই খেজুর রসের একটি মারাত্মক অপকারিতা রয়েছে, তা আমরা অনেকেই অবগত নই। গাছিরা বিকালে খেজুর গাছে মাটির হাঁড়ি লাগিয়ে আসে। মাটির হাঁড়ি সর্বত্রই  খোলা অবস্থায় থাকে। রাতে ওই খোলা খেজুর রসের হাঁড়িতে বাদুড় এসে বসে এবং রস পান করে। তখন রসের সঙ্গে বাদুড়ের মুখনিঃসৃত লালা মিশে যায়। আর এভাবেই বাদুড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে নিপা নামের ভাইরাস আক্রমণ করে বসে। নিপা ভাইরাস একটি মারাত্মক ভাইরাস। এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে প্রথমে জ্বর আসে। একপর্যায়ে খিঁচুনি, অতঃপর মৃত্যুও হতে পারে। যেহেতু রোগটি বাদুড়চাটা খেজুর রস পান করার জন্য হয়ে থাকে, সেহেতু আমাদের খেজুর রস আহরণে সতর্ক হতে হবে। আসুন আমরা স্বাস্থ্যসচেতন হই, সতর্কতা অবলম্বন করি।

Monday, 15 November 2021

 ঠোঁটের কালো ভাব দূর করার উপায়

ঠোঁটের কালো ভাব দূর করার উপায়

5/5 - (13 votes)

প্রত্যেক মানুষ এক জোড়া সুন্দর ঠোঁটের প্রতি আকৃষ্ট হয়। যখন অন্য লোকের ঠোঁট সুন্দর এবং দাগহীন দেখায়,তখন নিজের ঠোঁটও ঠিক তেমন সুন্দর দাগহীন হওয়ার ইচ্ছাটি অজান্তে সবার মনে জাগ্রত হয়। তবে আমরা আমাদের ঠোঁটকে সুন্দর করতে চাইলেও আমাদের মধ্যে কিছু অভ্যাস রয়েছে যা আমাদের ঠোঁটে কালো দাগ তৈরি করে এবং আমাদের ঠোঁট দেখতে কালো দেখায়। ঠোঁট কেন কালো হয় এবং ঠোঁটের কালো ভাব দূর করার উপায়জানতে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন।

ঠোঁট কেন কালো হয়

ঠোঁট আমাদের দেহের সর্বাধিক দৃশ্যমান অঙ্গ। সুন্দর ঠোঁট আপনার চেহারা আকর্ষণীয় করে তোলে এবং আপনার ব্যক্তিত্ব বাড়ায়। তবে ঠোঁট শুষ্ক হওয়া, কালো ভাব হওয়া, ফেটে যাওয়া এগুলো খুব নিয়মিত সমস্যা। ঠোঁটের ত্বক খুব নরম এবং সংবেদনশীল। ঠান্ডা-গরম, সূর্যের আলো, দূষণ সবই ঠোঁটের পক্ষে ক্ষতিকারক। প্রত্যেকে নিজের ঠোঁটকে আরও আকর্ষণীয় করতে এবং পোশাকের সাথে মিল রাখতে বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে।

বর্তমানের প্রতিকূল পরিবেশ এবং বিভিন্ন প্রসাধনীগুলির রাসায়নিক প্রভাবের কারণে এই সুন্দর গোলাপী ঠোঁটটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে কালো হয়ে যায়। আসুন ঠোঁট কালো হওয়ার কারণ গুলো জেনে নেয়া যাক~

১. অতিরিক্ত চা, কফি এবং অন্যান্য পানীয় পান করা আপনার ঠোঁট কালো হওয়ার অন্যতম একটি কারণ । অতিরিক্ত চা,কফি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। দিনে দুবারের বেশি চা এবং কফি খাওয়া উচিত নয়। প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন যা ঠোঁটকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে।

২. আপনার যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে তবে তা বাদ দিন । কারণ, আপনি যদি ধূমপান করেন তবে আপনার ঠোঁট কালো হবে।

৩. ডিহাইড্রেশন আপনার ঠোঁট থেকে আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে জল পান করুন। দিনে কমপক্ষে 8-10 গ্লাস পানি খান।

৪. সরাসরি সূর্যের আলো ঠোঁটের স্বাভাবিক রঙ নষ্ট করে দেয়। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। বাইরে বেরোনোর ​​সময় উচ্চ মানের সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন।

৫. ঠোঁট স্ক্রাব না করলেও ঠোঁট কালো হয়ে যায়। তাই মাঝে মাঝে ঠোঁটে চিনি ও ক্রিমের মিশ্রণ তৈরি করে তা ঘষুন। এতে ঠোঁটের সৌন্দর্য অটুট থাকে।

৬. এছাড়াও অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহারে অর্থাৎ লিপস্টিকের কারণে আমাদের ঠোঁট কালো হয়।

৭. আবার অনেকে ঠোঁটে কিছু ব্যবহার করে না তারপরও ঠোঁট কালচে হয়ে যায়। নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন না নেয়ার কারণে এমনটা হয়।

যে করণেই ঠোঁট কালো হক না কেন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ও নিয়মিত যত্ন নিলেই ঠোঁটের এই কালো দাগ দূর করার সম্ভব। আসুন পদ্ধতি গুলো জেনে নেয়া যাক~

মেয়েদের ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায় 

১. হলুদ: ত্বক উজ্জ্বল করার একটি সুপরিচিত উপাদান হলো হলুদ ।

আধা চা চামচ হলুদের সাথে আধা চা চামচ দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ঠোঁটে নিয়মিত ম্যাসেজ করলে কালচে ভাব দূর হয়।

২) লেবু: লেবু ঠোঁটের মৃত চামড়া দূর করতে সহায়তা করে। এর প্রাকৃতিক ব্লিচিং ঠোঁটের কালো দাগ কমায় এবং মসৃণতা আনে।

৩.শসা: শসার রস একটি শীতল কারক উপাদান। এটি ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতে পারে। এটি ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্তি দিয়ে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। ফলে ঠোঁট গোলাপি ও নরম হয়ে ওঠে।

৪.বিটরুট: ঠোঁটে বিটরুট ম্যাসাজ করুন এবং পাঁচ থেকে 10 মিনিট অপেক্ষা করুন, ত্বক এটি শুষে নেবে। কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে ফেলুন। কিছু দিন ব্যবহারের সাথে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

৫. জলপাই তেল: রাতে ঘুমানোর আগে জলপাইয়ের তেল দিয়ে ঠোঁট ম্যাসেজ করা উপকারী। এটি ঠোঁটের কালো রঙ হালকা করার পাশাপাশি ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ঠোঁটকে মসৃণ করে তোলে।

৬. চিনি: চিনি একটি খুব ভাল এক্সফোলিয়েটর যা ঠোঁটের মৃত কোষগুলি অপসারণে সহায়তা করে।

এক চা চামচ মাখনের সাথে চিনির দানা মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন এবং দিনে বেশ কয়েকবার ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন।

৭.অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা ত্বকের ‘মেলানিন’ হ্রাস করে। টাটকা অ্যালোভেরা ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন। এটি শুকনো হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন, উপকার পাবেন।

৮. নারকেল তেল: ঠোঁটের কালচে ভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হ’ল নারকেল তেল ব্যবহার করা। ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতি রাতে আঙুল দিয়ে ঠোঁটে নারকেল তেল ব্যবহার করুন, এটি ঠোঁটের কালো দাগ হ্রাস করবে।

৯. গোলাপজল: আধা চা চামচ গোলাপজলের সাথে মধু মিশিয়ে দিনে দুবার ঠোঁটে লাগান। নিয়মিত ব্যবহারে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে।

১০.গাজরের রস: একটি পাত্রে গাজরের রস নিন এবং তুলো দিয়ে ঠোঁটে লাগান। আপনি এতে একটি সামান্য জাফরান মিশ্রণ করতে পারেন। এটি ঠোঁটের আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেবে, একই সাথে ঠোঁটের গোলাপি ভাব ফিরে আসবে।

১১. কমলার খোসা: শুকনো কমলার খোসা গুঁড়া করে এতে সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন।

১২.পেট্রোলিয়াম জেলি: আমাদের ত্বকের অন্যান্য অংশের মতো কিছুটা তেল ঠোঁট থেকে তৈরি হয়, তাকে সেবাম বলে। এটা খুব প্রয়োজনীয়। তাই ঠোঁটকে সবসময় আর্দ্র রাখতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় লিপ বাম লাগানো উচিত। আপনি বাড়িতে থাকলে কোকো বাটার লাগাতে পারেন। শুনে আপনি অবাক হতে পারেন, তবে শুধু শীতকালেই নয়, যদি আপনি আপনার ঠোঁট গোলাপী করতে চান তবে আপনাকে সারা বছর পেট্রোলিয়াম জেলি প্রয়োগ করতে হবে। ঠোঁটকে আর্দ্র রাখতে এটি অত্যন্ত জরুরি।

১৩. রিমুভ লিপস্টিক : প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে আপনার ঠোঁট থেকে লিপস্টিক বা লিপগ্লস ভালো ভাবে রিমুভ করুন।লিপ্সটিক রিমুভ করতে জলপাই তেল বা বাদাম তেল দিয়ে হালকাভাবে মুছুন। রাতে শোবার আগে অবশ্যই এই ঠোঁটের মেকআপটি সরিয়ে ফেলতে হবে। এটিই বিশেষত আপনার ঠোঁট কালো করার জন্য দায়ী।

১৪.পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতা থেকে রস আলাদা করে ঠোঁটে নিয়মিত লাগান।এই রস আইস কিউব করে ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন, তারপরে বাদাম তেল এবং জলপাই তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। ঠোঁটের প্রাকৃতিক রঙ ফিরে আসবে।

ছেলেদের ঠোঁটের কালো ভাব দূর করার উপায়

ধুমপান করা খুব খারাপ একটি অভ্যাস। ধুমপান ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সাথে সাথে মানব দেহে আরও অনেক ধরনের রোগের জন্ম দেয়। ধুমপান ঠোঁটকে কালো করে তোলে। যারা ধুমপান করে তাদের বেশির ভাগেরই ঠোঁটে কালচে ভাব দেখা যায়।

আসুন যেনে নেয়া যাক ঠোঁটের এই কালো ভাব দূর করার কয়েকটি উপায়~

১.লেবু-চিনি: লেবুর পাতলা টুকরোতে সামান্য চিনি ছড়িয়ে দিন এবং এটি প্রতিদিন ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন। চিনি স্ক্রাবের কাজ করে । চিনি ঠোঁটের মৃত কোষ ঘষে তুলতে সহায়তা করে এবং লেবু ঠোঁটের কালো হওয়া ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

২. লেবুর রস-গ্লিসারিন: লেবুর রসের সাথে কিছুটা গ্লিসারিন মিশিয়ে দিনে অন্তত দু’বার ঠোঁটে লাগান। দশ দিনের মধ্যেই উপকার দেখতে পারবেন।

৩. মধু চিনি-বাদামের তেল: মধু, চিনি এবং বাদামের তেল একসাথে মেশান। এবার এই মিশ্রণটি দিয়ে আপনার ঠোঁটের নিয়মিত ম্যাসাজ করুন। এই মিশ্রণটি আপনার ঠোঁটের উজ্জ্বলতার পাশাপাশি ঠোঁটের কোমলতা বাড়িয়ে তুলবে।

৪) টমেটোর রস: দিনে অন্তত দু’বার ঠোঁটে টমেটোর রস লাগান। এটি আপনার ঠোঁট উজ্জ্বল করবে।

৫) চিনি-মধু: কয়েক ফোঁটা জলপাইয়ের তেল, মধু এবং চিনিত মিশিয়ে আলতো করে ঠোঁটে লাগিয়ে দশ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এই মিশ্রণটি আপনার ঠোঁট উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

৬. দুধ-টক দই: ল্যাকটিক অ্যাসিড ঠোঁট উজ্জ্বল করতে খুব উপকারী। দুধ বা টক দুধে প্রচুর ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। দিনে একবারে তুলার বল দিয়ে দুধ বা টক দই আপনার ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন। এটি ঠোঁটের মৃত ত্বক ঘষে তুলতে সহায়তা করবে । একই সাথে এটি ঠোঁটের কালচে ভাব মুছে ফেলতেও সহায়তা করবে ।

৭.বরফ: যে কোনও দাগের উপরে বরফ ঘষলে দাগ হালকা হয়। প্রতিদিন এক টুকরো বরফ ঠোঁটে ঘষুন। এটি আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করবে। বরফ ঠোঁটের আর্দ্রতার পরিমাণ ঠিক রাখার সাথে সাথে ঠোঁটকে রুক্ষতা থেকে রক্ষা করে।

৮. বিটরুট: ঠোঁটের রং হালকা করতে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য বিটরুট একটি খুব কার্যকর উপাদান। বিটরুটের রস ঠোঁটে লালচে একটি আভা নিয়ে আসে। তাই ঠোঁটের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি ঠোঁটে তাজা বিটরুটের রস নিয়মিত লাগাতে পারেন।

৯. দুধের সর: দুধের সরের মাধ্যমে ঠোঁটের গোলাপি রঙ ধরে রাখার এই পদ্ধতিটি প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। আপনিও এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনার ঠোঁটের হারানো রঙ ফিরে পেতে পারেন। দুধের সাথে মধু মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। দিনে কয়েকবার এটি ব্যবহার করুন। গোলাপী আভা কয়েক দিনের মধ্যে আপনার ঠোঁটে ফিরে আসবে।

সর্বোপরি ধূমপান ছেড়ে দিন। যদি আপনি ধূমপানের কারণে হওয়া ঠোঁটের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে চান তবে আপনাকে ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। অন্যথায় কালো দাগ থেকেই যাবে।

আপনি যদি নিয়মগুলি অনুসরণ করেন তবে দেখতে পাবেন যে আপনার ঠোঁট গোলাপের পাপড়ির মতো নরম, কোমল, গোলাপী এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।