Monday, 15 November 2021

 ঠোঁটের কালো ভাব দূর করার উপায়

ঠোঁটের কালো ভাব দূর করার উপায়

5/5 - (13 votes)

প্রত্যেক মানুষ এক জোড়া সুন্দর ঠোঁটের প্রতি আকৃষ্ট হয়। যখন অন্য লোকের ঠোঁট সুন্দর এবং দাগহীন দেখায়,তখন নিজের ঠোঁটও ঠিক তেমন সুন্দর দাগহীন হওয়ার ইচ্ছাটি অজান্তে সবার মনে জাগ্রত হয়। তবে আমরা আমাদের ঠোঁটকে সুন্দর করতে চাইলেও আমাদের মধ্যে কিছু অভ্যাস রয়েছে যা আমাদের ঠোঁটে কালো দাগ তৈরি করে এবং আমাদের ঠোঁট দেখতে কালো দেখায়। ঠোঁট কেন কালো হয় এবং ঠোঁটের কালো ভাব দূর করার উপায়জানতে সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি পড়ুন।

ঠোঁট কেন কালো হয়

ঠোঁট আমাদের দেহের সর্বাধিক দৃশ্যমান অঙ্গ। সুন্দর ঠোঁট আপনার চেহারা আকর্ষণীয় করে তোলে এবং আপনার ব্যক্তিত্ব বাড়ায়। তবে ঠোঁট শুষ্ক হওয়া, কালো ভাব হওয়া, ফেটে যাওয়া এগুলো খুব নিয়মিত সমস্যা। ঠোঁটের ত্বক খুব নরম এবং সংবেদনশীল। ঠান্ডা-গরম, সূর্যের আলো, দূষণ সবই ঠোঁটের পক্ষে ক্ষতিকারক। প্রত্যেকে নিজের ঠোঁটকে আরও আকর্ষণীয় করতে এবং পোশাকের সাথে মিল রাখতে বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করে।

বর্তমানের প্রতিকূল পরিবেশ এবং বিভিন্ন প্রসাধনীগুলির রাসায়নিক প্রভাবের কারণে এই সুন্দর গোলাপী ঠোঁটটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে কালো হয়ে যায়। আসুন ঠোঁট কালো হওয়ার কারণ গুলো জেনে নেয়া যাক~

১. অতিরিক্ত চা, কফি এবং অন্যান্য পানীয় পান করা আপনার ঠোঁট কালো হওয়ার অন্যতম একটি কারণ । অতিরিক্ত চা,কফি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। দিনে দুবারের বেশি চা এবং কফি খাওয়া উচিত নয়। প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন যা ঠোঁটকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে।

২. আপনার যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে তবে তা বাদ দিন । কারণ, আপনি যদি ধূমপান করেন তবে আপনার ঠোঁট কালো হবে।

৩. ডিহাইড্রেশন আপনার ঠোঁট থেকে আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে জল পান করুন। দিনে কমপক্ষে 8-10 গ্লাস পানি খান।

৪. সরাসরি সূর্যের আলো ঠোঁটের স্বাভাবিক রঙ নষ্ট করে দেয়। যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। বাইরে বেরোনোর ​​সময় উচ্চ মানের সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন।

৫. ঠোঁট স্ক্রাব না করলেও ঠোঁট কালো হয়ে যায়। তাই মাঝে মাঝে ঠোঁটে চিনি ও ক্রিমের মিশ্রণ তৈরি করে তা ঘষুন। এতে ঠোঁটের সৌন্দর্য অটুট থাকে।

৬. এছাড়াও অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহারে অর্থাৎ লিপস্টিকের কারণে আমাদের ঠোঁট কালো হয়।

৭. আবার অনেকে ঠোঁটে কিছু ব্যবহার করে না তারপরও ঠোঁট কালচে হয়ে যায়। নিয়মিত ঠোঁটের যত্ন না নেয়ার কারণে এমনটা হয়।

যে করণেই ঠোঁট কালো হক না কেন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ও নিয়মিত যত্ন নিলেই ঠোঁটের এই কালো দাগ দূর করার সম্ভব। আসুন পদ্ধতি গুলো জেনে নেয়া যাক~

মেয়েদের ঠোঁটের কালো দাগ দূর করার উপায় 

১. হলুদ: ত্বক উজ্জ্বল করার একটি সুপরিচিত উপাদান হলো হলুদ ।

আধা চা চামচ হলুদের সাথে আধা চা চামচ দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ঠোঁটে নিয়মিত ম্যাসেজ করলে কালচে ভাব দূর হয়।

২) লেবু: লেবু ঠোঁটের মৃত চামড়া দূর করতে সহায়তা করে। এর প্রাকৃতিক ব্লিচিং ঠোঁটের কালো দাগ কমায় এবং মসৃণতা আনে।

৩.শসা: শসার রস একটি শীতল কারক উপাদান। এটি ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতে পারে। এটি ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্তি দিয়ে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। ফলে ঠোঁট গোলাপি ও নরম হয়ে ওঠে।

৪.বিটরুট: ঠোঁটে বিটরুট ম্যাসাজ করুন এবং পাঁচ থেকে 10 মিনিট অপেক্ষা করুন, ত্বক এটি শুষে নেবে। কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে ফেলুন। কিছু দিন ব্যবহারের সাথে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

৫. জলপাই তেল: রাতে ঘুমানোর আগে জলপাইয়ের তেল দিয়ে ঠোঁট ম্যাসেজ করা উপকারী। এটি ঠোঁটের কালো রঙ হালকা করার পাশাপাশি ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ঠোঁটকে মসৃণ করে তোলে।

৬. চিনি: চিনি একটি খুব ভাল এক্সফোলিয়েটর যা ঠোঁটের মৃত কোষগুলি অপসারণে সহায়তা করে।

এক চা চামচ মাখনের সাথে চিনির দানা মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন এবং দিনে বেশ কয়েকবার ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন।

৭.অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা ত্বকের ‘মেলানিন’ হ্রাস করে। টাটকা অ্যালোভেরা ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন। এটি শুকনো হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন, উপকার পাবেন।

৮. নারকেল তেল: ঠোঁটের কালচে ভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হ’ল নারকেল তেল ব্যবহার করা। ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতি রাতে আঙুল দিয়ে ঠোঁটে নারকেল তেল ব্যবহার করুন, এটি ঠোঁটের কালো দাগ হ্রাস করবে।

৯. গোলাপজল: আধা চা চামচ গোলাপজলের সাথে মধু মিশিয়ে দিনে দুবার ঠোঁটে লাগান। নিয়মিত ব্যবহারে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে।

১০.গাজরের রস: একটি পাত্রে গাজরের রস নিন এবং তুলো দিয়ে ঠোঁটে লাগান। আপনি এতে একটি সামান্য জাফরান মিশ্রণ করতে পারেন। এটি ঠোঁটের আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেবে, একই সাথে ঠোঁটের গোলাপি ভাব ফিরে আসবে।

১১. কমলার খোসা: শুকনো কমলার খোসা গুঁড়া করে এতে সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন।

১২.পেট্রোলিয়াম জেলি: আমাদের ত্বকের অন্যান্য অংশের মতো কিছুটা তেল ঠোঁট থেকে তৈরি হয়, তাকে সেবাম বলে। এটা খুব প্রয়োজনীয়। তাই ঠোঁটকে সবসময় আর্দ্র রাখতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় লিপ বাম লাগানো উচিত। আপনি বাড়িতে থাকলে কোকো বাটার লাগাতে পারেন। শুনে আপনি অবাক হতে পারেন, তবে শুধু শীতকালেই নয়, যদি আপনি আপনার ঠোঁট গোলাপী করতে চান তবে আপনাকে সারা বছর পেট্রোলিয়াম জেলি প্রয়োগ করতে হবে। ঠোঁটকে আর্দ্র রাখতে এটি অত্যন্ত জরুরি।

১৩. রিমুভ লিপস্টিক : প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে আপনার ঠোঁট থেকে লিপস্টিক বা লিপগ্লস ভালো ভাবে রিমুভ করুন।লিপ্সটিক রিমুভ করতে জলপাই তেল বা বাদাম তেল দিয়ে হালকাভাবে মুছুন। রাতে শোবার আগে অবশ্যই এই ঠোঁটের মেকআপটি সরিয়ে ফেলতে হবে। এটিই বিশেষত আপনার ঠোঁট কালো করার জন্য দায়ী।

১৪.পুদিনা পাতা: পুদিনা পাতা থেকে রস আলাদা করে ঠোঁটে নিয়মিত লাগান।এই রস আইস কিউব করে ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন, তারপরে বাদাম তেল এবং জলপাই তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। ঠোঁটের প্রাকৃতিক রঙ ফিরে আসবে।

ছেলেদের ঠোঁটের কালো ভাব দূর করার উপায়

ধুমপান করা খুব খারাপ একটি অভ্যাস। ধুমপান ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সাথে সাথে মানব দেহে আরও অনেক ধরনের রোগের জন্ম দেয়। ধুমপান ঠোঁটকে কালো করে তোলে। যারা ধুমপান করে তাদের বেশির ভাগেরই ঠোঁটে কালচে ভাব দেখা যায়।

আসুন যেনে নেয়া যাক ঠোঁটের এই কালো ভাব দূর করার কয়েকটি উপায়~

১.লেবু-চিনি: লেবুর পাতলা টুকরোতে সামান্য চিনি ছড়িয়ে দিন এবং এটি প্রতিদিন ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন। চিনি স্ক্রাবের কাজ করে । চিনি ঠোঁটের মৃত কোষ ঘষে তুলতে সহায়তা করে এবং লেবু ঠোঁটের কালো হওয়া ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

২. লেবুর রস-গ্লিসারিন: লেবুর রসের সাথে কিছুটা গ্লিসারিন মিশিয়ে দিনে অন্তত দু’বার ঠোঁটে লাগান। দশ দিনের মধ্যেই উপকার দেখতে পারবেন।

৩. মধু চিনি-বাদামের তেল: মধু, চিনি এবং বাদামের তেল একসাথে মেশান। এবার এই মিশ্রণটি দিয়ে আপনার ঠোঁটের নিয়মিত ম্যাসাজ করুন। এই মিশ্রণটি আপনার ঠোঁটের উজ্জ্বলতার পাশাপাশি ঠোঁটের কোমলতা বাড়িয়ে তুলবে।

৪) টমেটোর রস: দিনে অন্তত দু’বার ঠোঁটে টমেটোর রস লাগান। এটি আপনার ঠোঁট উজ্জ্বল করবে।

৫) চিনি-মধু: কয়েক ফোঁটা জলপাইয়ের তেল, মধু এবং চিনিত মিশিয়ে আলতো করে ঠোঁটে লাগিয়ে দশ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এই মিশ্রণটি আপনার ঠোঁট উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।

৬. দুধ-টক দই: ল্যাকটিক অ্যাসিড ঠোঁট উজ্জ্বল করতে খুব উপকারী। দুধ বা টক দুধে প্রচুর ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে। দিনে একবারে তুলার বল দিয়ে দুধ বা টক দই আপনার ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন। এটি ঠোঁটের মৃত ত্বক ঘষে তুলতে সহায়তা করবে । একই সাথে এটি ঠোঁটের কালচে ভাব মুছে ফেলতেও সহায়তা করবে ।

৭.বরফ: যে কোনও দাগের উপরে বরফ ঘষলে দাগ হালকা হয়। প্রতিদিন এক টুকরো বরফ ঠোঁটে ঘষুন। এটি আপনার ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করবে। বরফ ঠোঁটের আর্দ্রতার পরিমাণ ঠিক রাখার সাথে সাথে ঠোঁটকে রুক্ষতা থেকে রক্ষা করে।

৮. বিটরুট: ঠোঁটের রং হালকা করতে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য বিটরুট একটি খুব কার্যকর উপাদান। বিটরুটের রস ঠোঁটে লালচে একটি আভা নিয়ে আসে। তাই ঠোঁটের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি ঠোঁটে তাজা বিটরুটের রস নিয়মিত লাগাতে পারেন।

৯. দুধের সর: দুধের সরের মাধ্যমে ঠোঁটের গোলাপি রঙ ধরে রাখার এই পদ্ধতিটি প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। আপনিও এই পদ্ধতির মাধ্যমে আপনার ঠোঁটের হারানো রঙ ফিরে পেতে পারেন। দুধের সাথে মধু মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান। দিনে কয়েকবার এটি ব্যবহার করুন। গোলাপী আভা কয়েক দিনের মধ্যে আপনার ঠোঁটে ফিরে আসবে।

সর্বোপরি ধূমপান ছেড়ে দিন। যদি আপনি ধূমপানের কারণে হওয়া ঠোঁটের কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে চান তবে আপনাকে ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। অন্যথায় কালো দাগ থেকেই যাবে।

আপনি যদি নিয়মগুলি অনুসরণ করেন তবে দেখতে পাবেন যে আপনার ঠোঁট গোলাপের পাপড়ির মতো নরম, কোমল, গোলাপী এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।

Tuesday, 19 October 2021

কিডনী ভাল রাখার উপায়ঃ



কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কিডনিকে ভালো রাখতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। যেটিকে ‘রুল অব এইটস বা আট নিয়ম’ বলা হয়। এটি ঠিকমত পালন করলে কিডনি ভালো রাখা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেপ্রোলোজি বিভাগের ডা. এএসএম তানিম আনোয়ার।


তিনি জানান, ‘রুল অব এইটস বা আট নিয়ম’ অনুযায়ী, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে। যাদের প্রেশার আছে, তাদের প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।



নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সেটা সাইক্লিং হতে পারে, সুইমিং হতে পারে কিংবা হাঁটাহাঁটি হতে পারে। যাদের ব্যাথার ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের তা পরিহার করতে হবে। আর যারা ভাতের সঙ্গে অতিরিক্ত কাঁচা লবণ খান, তা পরিহার করতে হবে। এ ছাড়া নিয়মিয়ত স্ক্রিনিং করতে হবে। যদিও আমাদের দেশে এই ব্যবস্থা নেই। তবুও অন্তত একবার হলেও কিডনিটা ভালো আছে কিনা চেক আপ করতে হবে।



 

ডা. এএসএম তানিম আনোয়ার আরও জানান, আর খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে বলতে চাই, আপনারা ফ্রুটস জাতীয় খাবার কম খাবেন। দেড় লিটারের বেশি পানি খাবেন না। যদি ঘাম বেশি হয়, তখন দুই লিটার পর্যন্ত খেতে পারবেন। ভাতের সাথে কাঁচা লবণ খাবেন না।


তেলচর্বি জাতীয় খাবার কম খাবেন। গরুর মাংস, খাসির মাংস কম খাবেন। খেলেও এক টুকরার বেশি খাবেন না। যেসব মাছ তেল আছে- যেমন ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, শুটকি মাছ, পাঙ্গাস মাছ ইত্যাদি কম খাবেন।


আর যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা মিষ্টি জাতীয় খাবার একদম খাবেন না। ডালের ওপরের পাতলা পানিটা খেতে পারবেন, ঘন ডাল কম খাবেন। যাদের ক্রিয়েটিনিন ২ এর ওপরে তাদেরকে রমজানের রোজা রাখতে মানা করি। রাখলেও ছোলা-বুট, পিঁয়াজু-বেগুনি, হালিম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।শাক-সবজির মধ্যে পুঁই শাক ও পালং শাক খেতে না করি। বিচি জাতীয় সবজি যেমন- শিম, ঢেড়শ, পটল না খাওয়াই ভালো এবং ফুলকপি, বাধাকপি কম খাবেন।


এ ছাড়া যেকোনো ধরনের ফল আর ফলের রস কম খাবেন। বেশি খেতে চাইলে আপেল, নাশপাতি, পেয়ারা বিচি ফেলে খেতে পারবেন। তিনটা ফল আমরা একদম নিষেধ করি। সেগুলো হলো- কামরাঙা, বেলম্বু, এলোবেরা একদমই নিষেধ। ডিম-দুধ খেতে পারবেন। প্রেশার বেশি থাকলে ডিমের কসুমটা বাদ দিয়ে খাবেন। ক্যালসিয়াম কম হলে দুধ খাবেন। তবে সেক্ষেত্রে যদি আধা গ্লাস দুধ খান তাহলে আধা গ্লাস পানি কম খেতে হবে।


Monday, 18 October 2021

 কচু শাকের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেনিন অবশ্যই



সুস্থ থাকার জন্য চিকিত্‍সকরা প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তেমনি একটি উপকারী শাক হচ্ছে কচু শাক। কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ প্রচুর। তাইতো এর চাহিদাও অনেক। কচু শাকের পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় এর চাহিদা ব্যপক। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে কচু শাক খুবই জনপ্রিয়।

কচু শাক নানা ভাবে খাওয়া হয়। তবে কচুপাতা ভর্তা ও তরকারিতে বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ইলিশ, চিংড়ি, ছোট মাছ বা শুটকি মাছ দিয়ে কচু শাকের তরকারি খুবই জনপ্রিয়।


কচুশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তাররাই কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই শাকে ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সি-ও। এছাড়া কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। এইশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উত্‍স, রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচু শাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কচু শাকই দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার অনেকখানি পূরণ করতে পারে।


কচুশাকের পুষ্টিগুণ


কচুশাকের পুষ্টি উপাদান বেশি থাকায় সব বয়সের মানুষ খেতে পারে। এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সমূহ। নিচে কচু শাকের পুষ্টি উপাদান আলোচনা করা হলো-


প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে থাকে, শর্করা-৬.৮ গ্রাম, প্রোটিন- ৩.৯ গ্রাম, লৌহ-১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)-০.২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন)-০.২৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন 'সি'-১২ মিলিগ্রাম, স্নেহ বা চর্বি-১.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ২২৭ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি-৫৬ কিলোক্যালরি।


কচু শাকের উপকারিতা


>> এই শাকের সব চেয়ে বড় উপকারিতা হলো, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠনে কচু শাকের তুলনা হয়না। তাছাড়া ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কচু শাক খেলে দাঁত ও হাড় ভালো থাকবে।


>> কচু শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন থাকে। এই আয়রন আমাদের রক্তশূন্যতা ভোগা থেকে রক্ষা করে। তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচু শাক খাওয়া অবশ্যই দরকার।


>> কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে যা খাবারকে অতি সহজে হজম করতে সাহায্য করে। যেসব রোগীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত কচু শাক খেতে পারেন। এতে আপনাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হবে।


>> কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ফলে এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোট বেলা থেকেই কচু শাক খাওয়ানো প্রত্যেকের উচিত।


>> কচু শাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে। এটি আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। রাত কানা রোগ সারাতে কচু শাকের তুলনা হয় না।


>> কচু শাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচু শাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচু শাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও দিন দিন কমে।


>> কচু শাকে বিদ্যমান বিভিন্ন রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক আমাদের কাছে সহজ লভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী নারীরা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু বা কচু শাক খেতে পারেন।


>> আমাদের শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে থাকে।


কচু শাকের অপকারিতা


>> কচু শাকের অপকারিতা সামান্য পরিমানে রয়েছে। কচু শাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ এতে অক্সলেট নামক উপাদান রয়েছে। এই জন্য কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত।


>> তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা বেশি আছে তাদের কচু বা কচু শাক না খাওয়াই ভালো।


>> কচুশাকের অপকারিতা এর মধ্যে আর একটি অন্যতম গ্যাসট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

Tuesday, 12 October 2021

 


একাধিক গবেষণার পর চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা জানিয়েছেন, আজকের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে শরীর বাঁচাতে বেদানার রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে বেদানার ভিতরে উপস্থিত ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আরও নানাবিধ শক্তিশালী উপাদান দেহে প্রবেশ করা মাত্র প্রতিটি কোষ, শিরা এবং উপ-শিরাকে, সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে তোলে। ফলে যে ছোট বা বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। শুধু তাই নয়, শরীর এতটাই চাঙ্গা হয়ে ওঠে যে আয়ু বাড়ে চোখে পরার মতো। 


তবে এখানেই শেষ নয়, প্রতিদিনের ডায়েটে এই ফলের রসকে জায়গা করে দিলে আরও নানাবিধ উপকার মেলে। চলুন আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন থেকে জেনে নেওয়া যাক সেগুলো-


অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ক্যানসার বিরোধী বৈশিষ্ট্য- 

বেদানার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা দূষিত ও তামাক জাতীয় জিনিস থেকে পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থ থেকে কোষকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, ডিএনএ এর ক্ষতি রোধ ও ক্যানসার হওয়া থেকে রক্ষা করে। হার্ভার্ড রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গবেষণায় দেখা গেছে যে বেদানার রস ক্ষতিকারক এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।


রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে-


প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকার কারণে বেদানা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। ফলে স্ট্রেস এবং টেনশন কমে, হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। যদি উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাহলে নিয়মিত বেদানা খাওয়ার অভ্যাস করুন উপকার পাবেন।


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়-


বেদানার  ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গুণ আছে। শরীরের ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বেদানার রস।


হজমশক্তি বাড়ায়-


বেদানায় দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ থাকায় এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।


হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়-


বেদানা দেহের ক্ষতিকর কোলস্টেরল বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়। এতে রক্তচলাচল বৃদ্ধি পায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।


স্মৃতিশক্তি বাড়ায়-


বেদানা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। আর এ কারণে এটি অ্যালঝেইমার্সের মতো রোগীদের জন্যও উপকারি।


রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়-


আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ বেদানা রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। এতে অ্যানেমিয়া ও রক্তের নানা সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে।


ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী-


বেদানা ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী। এটি মিষ্টি হলেও সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের কোনও সমস্যা হয় না। বেদানার রসে ফ্রুক্টোজ থাকলেও এটি অন্য ফলের রসের মতো রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না।


ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে-


বেদানা ত্বক সুস্থ রাখতে অনেক ভূমিকা পালন করে। ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, সাইট্রিক আসিড ও ট্যানিন সমৃদ্ধ বেদানা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষ উপকারী। এটি ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে।


ব্যথা দূর করতে ডালিম-


বাত, অস্টিওআর্থারাইটিস, পেশির ব্যথা কমাতে সাহায্য করে বেদানা। তরুণাস্থির ক্ষয় রুখতেও উপকারী বেদানা। এছাড়া এটি হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করে।

 <script async src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-7758039334307892"

     crossorigin="anonymous"></script>

তিলের লাড্ডু

 





তিলের লাড্ডু


তিলের লাড্ডু তৈরি করতে প্রয়োজন হবে

তিল- ২৫০ গ্রাম, গুড়-২৫০ গ্রাম, ঘি- ১ কাপ।  


প্রণালী

তিল টেলে(তেল ছাড়া ভাজা) নিয়ে পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে নিন।

এবার চুলায় একটি পাত্রে গুড় জ্বাল দিন। গুড় গলে গেলে তিল দিয়ে নাড়তে থাকুন। গুড়ের সঙ্গে তিল মিলে শক্ত হয়ে এলে নামিয়ে নিন। একটি পাত্রে তিলের মিশ্রণ ঢেলে গরম থাকতেই ঘি দিয়ে মিশিয়ে নিন।

পছন্দ মতো আকারে লাড্ডু তৈরি করুন।

আপনারা চাইলে সব ধরনের লাড্ডুতে পছন্দ মতো লবণ দিতে পারেন।



Monday, 30 August 2021

হজমশক্তি বাড়ায় আমড়া

 



আমড়ায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম আর আঁঁশ আছে, যেগুলো শরীরের জন্য খুব দরকারি। হজমেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই তেল ও চর্বিযুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর আমড়া খেয়ে নিতে পারেন; হজমে সহায়ক হবে। আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি খেলে স্কার্ভি রোগ এড়ানো যায়। বিভিন্ন প্রকার ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে আমড়া। অসুস্থ ব্যক্তিদের মুখের স্বাদ ফিরিয়ে দেয়। 

সর্দি-কাশি-জ্বরের উপশমেও আমড়া অত্যন্ত উপকারী। শিশুর দৈহিক গঠনে ক্যালসিয়াম খুব দরকারি। ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস এই আমড়া। শিশুদের এই ফল খেতে উৎসাহিত করতে পারেন। এছাড়া এটি রক্তস্বল্পতাও দূর করে। কিছু ভেষজ গুণ আছে আমড়ায়। এটি পিত্তনাশক ও কফনাশক। আমড়া খেলে মুখে রুচি ফেরে, ক্ষুধা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। 

আমড়ায় থাকা ভিটামিন সি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। খাদ্যে থাকা ভিটামিন এ এবং ই এটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে দেহকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করে। দাঁতের মাড়ি শক্ত করে, দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত, পুঁজ, রক্তরস বের হওয়া প্রতিরোধ করে আমড়া। এর ভেতরের অংশের চেয়ে বাইরের খোসাতে রয়েছে বেশি ভিটামিন সি আর ফাইবার বা আঁশ, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে দ্বিগুণ শক্তিশালী। আর আঁশজাতীয় খাবার পাকস্থলী (স্টমাক), ক্ষুদ্রান্ত, গাছহদন্ত্রের (পেটের ভেতরের অংশবিশেষ) জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ।

Monday, 19 October 2020

যেভাবে রসুন খেলে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করা যাবে (Bacteria Cure)

 আজ থেকে ১৫০০ বছর ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রসুন ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ম্যাজিকের মত কাজ করে। জেনে নিনযেভাবে প্রতিদিন রসুন খেলে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।





প্রথমেই বলতে হয় হৃদযন্ত্র ও রক্তচাপের কথা। দেখা যাচ্ছে রক্তচলাচল স্বাভাবিক রেখে, হৃদযন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখে। বিপাকহার ঠিক রাখা, কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণেও রসুনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।



অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে রসুনের জুড়ি নেই। কাজেই নিয়মিত রসুন খাওয়া মানে রোগ জীবাণুকে দূরে রাখা।



চিকিৎসকরা বলছেন সবচেয়ে ভালো নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়া। স্যালাডে বা দইয়ে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। সকালেই খেতে হবে এর কোনও মানে নেই, দিনের যে কোনও সময় খেতে পারেন। পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দু কোয়া রসুনই যথেষ্ট।



Sunday, 4 October 2020

ঠাণ্ডা ও ফ্লু প্রতিরোধে রসুন (The benefits of garlic)

 



মসলাজাতীয় খাদ্য উপাদান রসুনের প্রাকৃতিক গুণের কথা কমবেশি আমাদের সবারই জানা। রসুন যে মানব স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি তা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। এতে রয়েছে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংক, ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজ উপাদান। এগুলোর বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। ঠাণ্ডাজনিত ফ্লু প্রতিরোধে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকরী।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: 
রসুনে থাকা উপাদান জীবাণু প্রতিরোধ করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রসুনে থাকা সালফার শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকার সঙ্গে ভাইরাসের সংযোগ ঘটতে দেয় না। এর ফলে সর্দি এবং ফ্লু সহজে আক্রান্ত করতে পারে না।

ঠাণ্ডা ও ফ্লু প্রতিরোধ করে: 
গবেষণায় দেখা গেছে- রসুন কেবল অসুখই প্রতিরোধ করে না, এটি বিভিন্ন রোগের উপসর্গও কমায়। অনেকেই প্রায়ই সর্দি এবং ফ্লু আক্রান্ত হন। নিয়মিত রসুন খেলে এই অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

প্রতিদিন রসুন খাওয়া: 
অন্তত দু-এক কোয়া রসুন প্রতিদিন খাওয়া উচিত। 

অন্যান্য উপকারিতা: 
রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে তাৎপর্য ভূমিকা রাখে। এটি শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: 
রসুনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অতিরিক্ত রসুন খেলে পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া এবং প্রদাহপূর্ণ রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অতিমাত্রায় রসুন খেলে শরীর গরম হয় এবং ত্বকে র‌্যাশ দেখা দিতে পারে।

সতর্কতা: 
অ্যাজমা রোগী এবং গর্ভবতী নারীদের রসুন খাওয়া উচিত নয়। সার্জারি এবং অপারেশনের আগে রোগীর রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

দৈনিক ভিটামিন ‘সি’র চাহিদা মেটাবে মাত্র দুটো আমলকি (Best Source of Vitamin C )

 



আমলকি একটি পরিচিত ফল। এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকে।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে।
এছাড়াও এর রয়েছে আরও অনেক ঔষধি গুণ-

আমলকি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।

দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকির নির্যাস উপকারী।

হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক।

দাঁত, চুল ও ত্বক ভালো রাখে আমলকি।

খাওয়ার রুচি বাড়ায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল, রক্তাল্পতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে।

বহুমূত্র রোগে এটি উপকারী।

চুল ওঠা দূর করতে আমলকি বেশ উপকারী। চুলের খুশকির সমস্যা দূর করে।

আমলকির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণায় বলা হয়, আমলকি ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

প্রতিদিন সকালে আমলকির জুস খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে।

আমলকি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকি খুব দ্রুত কাজ করে। আমলকির গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

Wednesday, 30 September 2020

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেভাবে ফুসফুসের ব্যায়াম করবেন (How to Control Corona Virus)

 


করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক মানুষ বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ কারণে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে চিকিৎসার পাশাপাশি ফুসফুসের ব্যায়াম করার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বেশ কয়েকবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এ সময়ে আপনারা ফুসফুসের ব্যায়াম বা শ্বাসযন্ত্রের ব্যায়ামটা নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাবেন। কারণ, অনেক সময়ই কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের ব্যায়ামটা যেন নিয়মিতভাবে চালিয়ে যান।

যেভাবে করোনাভাইরাসে শনাক্ত ব্যক্তিরা ফুসফুসের ব্যায়াম করতে পারেন

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা খানম বলেন, ‌করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় বা আইসিইউতে যেতে হয়, তাদের ফুসফুসের ক্ষতিটা বেশি হয়। তাদের সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে, স্বাভাবিক জীবনযাপনে যেতে অনেক সময় লেগে যায় বলে আমরা দেখেছি। তাদের জন্য পরবর্তীতে 'ফুসফুসের পুনর্বাসন প্রোগ্রাম' দরকার হয়ে পড়ে।'

তবে যারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারাও চাইলে পুনর্বাসনের এসব ব্যায়াম করতে পারেন।

গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম

বুক ভরে শ্বাস নিয়ে যতক্ষণ সম্ভব ধরে রাখা- এরপরে আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে হবে। এর ফলে ফুসফুসের কোষগুলোর ব্যায়াম হয়, ফলে সেটির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে না।

এজন্য চিকিৎসকরা পরামর্শ দিচ্ছেন, পিঠ সোজা করে আরাম করে বসতে হবে। এরপর প্রথমে মুখ দিয়ে নিশ্বাস দিয়ে ফুসফুসের সব বাতাস বের করে দিতে হবে। এরপর আবার গভীর শ্বাস নিয়ে যতটা সম্ভব ফুসফুসে বাতাস ভরে নিতে হবে।

এরপর যতক্ষণ সম্ভব হয়, শ্বাস আটকে রাখুন। আবার একসাথে সব বাতাস বের করে দিন। এভাবে দিনে অন্তত দুইবার এই রকম ব্যায়াম করা যেতে পারে। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. আলতাফ হোসেন সরকার বলেন, লম্বা শ্বাস নিয়ে বুক ফুলিয়ে কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ১০ সেকেন্ড বোঝার জন্য এক হাজার এক, এক হাজার দুই, একহাজার তিন...এভাবে দশ পর্যন্ত গোনা যেতে পারে।

ইনসেন্টিভ স্প্যারোমেট্রি ব্যায়াম

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা খানম বলছেন, হাসপাতালের রোগীদের পাশাপাশি আউটডোরের রোগীদের জন্যও এই ব্যায়ামের সুপারিশ করা হয়। এখানে ছোট একটা ডিভাইসের মধ্যে তিনটা বল থাকে। শ্বাস দিয়ে রোগীদের সেই বলগুলো ডিভাইসের ভেতরে তুলতে হয়। প্রথমদিন হয়তো একটা, পরের দিন আরেকটা, এভাবে আস্তে আস্তে বল তোলার ক্ষমতা বাড়ে। তিনটা বল তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে আবার ছেড়ে দিতে হয়। এভাবে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে।

উপুড় হয়ে ঘুমানো

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা খানম বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে অনেক সময় অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হয়। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই এটা হয়। এজন্য উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে বা পাশ ফিরে শুয়ে থাকলে শরীরের অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। এভাবে শুয়ে থাকার সময় মাথার নিচে কোনো বালিশ ব্যবহার না করাই ভালো।

তবে বুক বেশি ভার ভার মনে হলে বা শ্বাস নিতে বেশি কষ্ট হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, বলছেন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা খানম।

শ্বাস নেওয়ার সময় হাত তোলা

ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. আলতাফ হোসেন সরকার বলছেন, 'আমরা অনেক সময় রোগীদের পরামর্শ দেই যে, যখন শ্বাস নেবে, তখন হাত ওপরে তুলতে হবে, আবার যখন শ্বাস ছেড়ে দেবে, তখন হাত নিচে নামিয়ে আনা হবে।' এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরের অঙ্গের একটি ব্যায়াম হবে।

আবার লম্বা শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের পাঁজরের নিচে হাত রেখে অনুভব করতে হবে যে, বুকটা বেলুনের মতো ফুলে উঠছে। এরপর সেটা আবার চাপ দিয়ে বাতাস বের করে দিতে হবে। এভাবে দিনে অন্তত কয়েকবার করতে হবে।

নাক বন্ধ করে শ্বাস নেওয়া

হাত দিয়ে প্রথমে নাকের বাম পাশ বন্ধ করে ডান পাশ দিয়ে লম্বা শাস নিন। ৫-১০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন। এরপর শ্বাস ছেড়ে দিন। এরপর নাকের ডান পাশ চেপে ধরে একইভাবে শ্বাস নিন। একইভাবে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রেখে শ্বাস ছেড়ে দিন। এভাবে প্রতিদিন কয়েকবার করে অভ্যাস করুন।

বাষ্প নেওয়া

ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. আলতাফ হোসেন সরকার বলছেন, অনেক সময় আমরা রোগীদের বাষ্প নেওয়ার পরামর্শ দেই। বাসায় থেকে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারা গরম পানির ভাপ নিতে পারেন। সেটাও ফুসফুসের জন্য ভালো।

ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশনের পরামর্শ হলো, গভীর শ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা দূর করে অধিক বায়ু সঞ্চালনে সাহায্য করতে পারে। এ ব্যায়াম করতে ৫-১০ বার গভীর শ্বাস নিতে হবে। তারপর কয়েক বার জোরে কাশি দিয়ে রিপিট করতে হবে। এতে ফুসফুস আরও শক্তিশালী হবে।

ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়াতে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার পর খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠলে হাঁটা শুরু করে শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পরবর্তী সময়ে হাঁটার গতি আরও বাড়াতে হবে। এসব ব্যায়াম স্বল্পমেয়াদী কোনো ব্যায়াম নয়। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যায়ামের চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।

যেসব ক্ষেত্রে এসব ব্যায়াম করা যাবে না

যদিও ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়াতে চিকিৎসকরা ব্যায়ামের পরামর্শ দিচ্ছেন, কিন্তু কারও যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা কাশি থাকে, তখন এই ধরনের ব্যায়াম না করাই ভালো। যাদের হৃদরোগ বা ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ রয়েছে, তারা ব্যায়ামের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

ব্যায়াম করার সময় অসুস্থ বোধ হলে বা শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যায়াম বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। কষ্ট বেশি হলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

সূত্র : বিবিস বাংলা